কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নিজেদের অবস্থান থেকে একেবারে ইউটার্ন নিয়ে সরকার পতনের ডাক দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত রাজনৈতিক ছাত্র নেতারা। প্রথমে নিজেদের আন্দোলনকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করলেও, সময়ের সাথে সাথে বারবার দাবি পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে আন্দোলনের দাবি পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রাজনৈতিক কর্মীরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এসেছে। সরকার যখন তাদের দাবি মেনে নিচ্ছিল, তখনই নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
শুরু থেকেই নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি শহীদ মিনার থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলাম গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব হলেও, মূলত নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে ২৩ জনই নুরুল হক নুরের সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা বারবার দাবি পরিবর্তন করে সরকার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। এই প্লাটফর্মে অরাজনৈতিক হিসেবে কাজ করা অনেক সমন্বয়কারী ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু বিএনপি, জামায়াত এবং তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নুরুল হক নুরের শিষ্যরা এখনও আছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সরকার পতনের এক দফা দাবি উত্থাপন করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।
প্রথমে ‘এক দাবি, কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না’ বলে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ‘কোটা সংস্কার করতে হবে’ দাবিতে পরিবর্তিত হয়। আদালতের রায় বাতিলের পরেও আন্দোলন থামেনি, বরং নতুন দাবি তুলে আন্দোলন জারি রাখা হয়। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদের আন্দোলনে যুক্ত করে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
১৫ জুলাই থেকে আন্দোলনে প্রথম রাজনৈতিক স্লোগান আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানির চেষ্টা করা হয়। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে স্লোগান পরিবর্তন করে ‘তুমি কে আমি কে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’ করা হয়। এরপর থেকেই আন্দোলন ক্রমশ রাজনৈতিক রূপ নেয়।
১৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহতের আশঙ্কা তৈরি হলে হলগুলো খালি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হয় এবং ১৬ তারিখ থেকে ছাত্রদল ও শিবির সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অবশেষে, শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষকে রাজপথে ডেকে তাদের সরকার পতনের দাবিই উত্থাপন করা হয়। এই দাবির পেছনে নির্দেশনা প্রদান করেছেন বিএনপির নেতা তারেক রহমান।